পেয়ারা চাষ

এসএসসি(ভোকেশনাল) - ফ্রুট এন্ড ভেজিটেবল কাল্টিভেশন-২ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | | NCTB BOOK

প্রাসঙ্গিক তথ্য 

পেয়ারা এমন একটি ফল যার মধ্যে একাধিক গুণের বিরল সমন্বয় ঘটেছে যা খুব কম ফলেই লক্ষ করা যায় । ইহা দ্রুত বর্ধনশীল এবং অপেক্ষাকৃত কম যত্নেই যে কোন স্থানে জন্মানো যায় । সাধারণত বীজ ও কলম দিয়ে বংশ বিস্তার করা হয় । বীজের গাছের ফলের গুণগত মাণ ঠিক থাকে না, বিধায় কলমের চারাই উত্তম । গুটি কলম, জোড় কলম, চোখ কলম দিয়ে বাগান করাই উত্তম ।

উপকরণ

(১) বীজ/চারা (২) সার (জৈব ও রাসায়নিক) (৩) কীটনাশক (৪) ছত্রাকনাশক (৫) স্প্রে যন্ত্র (৬) পানি ( ৭ ) লাঙল (৮) জোয়াল (৯) মই (১০) মুগুর (১১) খুরপি (১২) ছুরি (১৩) পলিথিন (১৪) সিকেচার (১৫) খুঁটি (১৬) রশি (১৭) করাত (১৮) ঘেরা ও খাচা (১৯) টিন (২০) ঝাঝরি (২১) বালি ২২) বাঁশ (২৩) ঝুড়ি (২৪) সিরিঞ্জ (২৫) তুলা (২৬) জাল (২৭) আলকাতরা / কেরোসিন (২৮) কোদাল ।

পেয়ারা চাষ করার জন্য নিম্নের কাজ। ধাপ অনুসরণ করতে হবে

১। পেয়ারার উন্নত জাত নির্বাচন করুন। প্রয়োজনীয় বীজ/চারা (কলমের চারা ১৯৪টি / একরে) সংগ্রহ করুন। 

২। পেয়ারা চাষের জন্য উঁচু স্থান এবং উর্বর সুনিষ্কাশিত গভীর বেলে-দোঁআশ মাটি নির্বাচন করুন । 

৩ । উন্নত জাতের গাছ থেকে থাকলে গুটি কলম করে চারা তৈরি করুন । 

৪ । পেয়ারার জমি ভালভাবে লাঙল দিয়ে ৪/৫টি চাষ ও মই দিন । মুগুর দিয়ে ঢেলা ভেঙে ফেলুন। হাতে আগাছা বেছে ফেলুন। জমি সমতল করুন। 

৫ । কলমের চারা ৫মি. (১৫) দূরত্বে রোপণ করুন। জমিতে ৫ মি. দূরত্বে ৬০ সে.মি চওড়া ও ৬০ সে.মি গভীর করে (১৯৪টি গর্ত তৈরি করুন ও গর্ত সপ্তাহকাল খোলা অবস্থায় রেখে দিন । এরপর গর্তে জৈব সার ১০ কেজি, খৈল ৫০০ গ্রাম, টিএসপি ৫০০ গ্রাম, ছাই ৪ কেজি মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে রাখুন । গর্ত ভরাট করার সময় উপরের মাটি নিচে এবং নিচের মাটি উপরে দিন। এর ১০-১৫ দিনপর গর্তে চারা রোপণ করুন । 

৬ । চারা রোপণের জন্য মাটির বলটি আস্ত রেখে সাবধানে টব থেকে চারা বের করুন । চারা পূর্বে যতটুকু মাটির নিচে ছিল ঠিক ততটুকুই পুঁতে দিন। চার পাশে হাতে চেপে মাটি বসিয়ে দিন। ঘেরা ও বেড়া দিয়ে বেঁধে দিন । 

৭ । চারা গাছের গোড়ায় আগাছা জন্মালে নিড়িয়ে তুলে ফেলুন। গোড়ার মাটি আলগা রাখুন । সেচের পর জো এলে চটা ভেঙে দিন । বয়স্ক গাছের ক্ষেত্রে বর্ষার আগে ও পরে কোদাল / লাগুল দিয়ে মাটি আলগা করে দিন । এছাড়াও মাঝে মাঝে নিড়িয়ে মাটি নরম ও আলগা রাখুন । 

৮। পেয়ারা গাছে সার উপরি প্রয়োগ দু'দফায় করুন। অর্ধেক সার বসন্তকালে ও বাকি অর্ধেক শরৎকালে প্রয়োগ করুন। 

৯ । চারা রোপণের পরের বছর গাছ প্রতি গোবর ১০ কেজি, ইউরিয়া ২০০ গ্রাম, টিএসপি ১৫০ গ্রাম ও এমপি ২০০ গ্রাম প্রয়োগ করুন । এরপর প্রতি বছর গোবর ২০ কেজি, ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম, টিএসপি ৪৫০ গ্রাম ও এমপি ৩৫০ গ্রাম প্রয়োগ করুন। পাঁচ বছর পর বা তদূর্ধ বয়ক গাছে গোবর ৪০ কেজি, ইউরিয়া ১.৫ কেজি, টিএসপি ১ কেজি ও এমপি ১ কেজি প্রয়োগ করুন। এসব সার দু' দফায় (৮ নং বর্ণিত নিয়েমে) প্রয়োগ করুন। 

১০ । গাছের গোড়ার (৩০-৪০ সে.মি) কিছু দূর থেকে শুরু করে দুপুরে যতটুকু ছায়া পড়ে সে অংশের মাটি কোদাল/লাঙল দিয়ে আলগা করুন। সার ছিটিয়ে ভালভাবে মাটিতে মিশিয়ে দিন। সার মাটি চাপা দিন ।

১১। সার প্রয়োগের পর গাছে থালা পদ্ধতিতে সেচ দিন। চারা গাছে সপ্তাহে ২ বার, বয়স্ক গাছে বর্ষাকাল বাদে ১৫ দিন পরপর এবং ফল আসার সময় ৮/১০ দিন পর সেচ দিন। বর্ষায় পানি নিকাশের ব্যবস্থা করুন।

১২। গাছের কাঠামো গঠনের জন্য গোড়ার ১ মি. এর মধ্যে কোন ডালপালা গজালে হেঁটে ফেলুন। এরপর চারিদিকে প্রসারিত ৩/৪ টি ডালপালা রেখে বাকিগুলো হেঁটে দিন । এছাড়াও গাছের ফেকরি, শুকনো, মরা, রোগাক্রান্ত ডালপালা হেঁটে দিন। ডালসহ ফল সংগ্রহ করতে পারেন। 

১৩ । কাণ্ডের মাজরা পোকা দমন-লিচুর বর্ণিত উপায়ে দমন করুন ।

১৪ । ফলের মাছি দমনের জন্য- (১) আক্রানত ফল এবং ফলের গায়ে লেগে থাকা ডিম ধ্বংস করুন, (২) প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৩০ গ্রাম ডিপটেরেক্স-৮০ গুলে ৮-১০ দিন পর পর ফলে স্প্রে করুন। 

১৫ । শোষক ও জাব পোকা দমন প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৪/৫ চা চামচ ম্যালাথিয়ন-৫৭ কাটনাশক গুলে গাছে স্প্রে করুন । 

১৬ । ফলের ক্ষত ও ফোস্কা (এনথ্রাকনাসে) রোগ দমন- (১) আক্রান্ত ফল ধ্বংস করে ফেলুন, (২) প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৪০/৫০ গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ পাউডার গুলে পক্ষ কাল পরপর ফলে/ঘাতে প্রে করুন । 

১৭ । গাছের মড়ক (উইন্ট) দমন- (১) আক্রান্ত গাছ ধ্বংস করুন, (২) বেশি করে জৈব সার প্রয়োগ করুন, (৩) নিকাশের ভালো ব্যবস্থা করুন, (৪) আক্রমণের প্রাথমিক স্তরে ডাইথেন এম-৪৫ স্প্রে করুন (১৬ নং বর্ণিত উপায়) । 

১৮ । ফল পরিপক্ক হওয়ার পর (হালকা হলুদ বা ফিকে সবুজ রং ধরার পর) ছিড়ে সংগ্রহ করুন । সংগ্রহ করে ভালো খারাপ বাছাই করুন ঝুড়িতে খড়/পাতা বিছিয়ে পেয়ারা স্তরে স্তরে সাজান। প্রতি সতরের মাঝে খড় বিছিয়ে দিন এবং ঝুড়িতে ভরে বাজারজাত করুন। জ্যাম, জালি তৈরি করে সংরক্ষণ করতে পারেন ।

সতর্কতা 

১। পেয়ারা শুষ্কতা সহ্য করতে পারে কিন্তু জলাবদ্ধতা সহ্য করে না । 

২। ফল বৃদ্ধি হওয়ার সময় জমিতে রসের অভাব ফল বৃদ্ধি ব্যাহত হয় । 

৩ । গাছের বয়স ২৩ বছর হলে, নতুন গাছ লাগানোই উত্তম ।

Content added By
Promotion